নেত্রকোণা প্রতিনিধি: নেত্রকোনায় পূর্বধলায় এক তরুণী অসুস্থতায় মারা গেছেন বলে তার মা প্রচার চালালেও ময়নাতদন্তে উঠে আসে শ্বাসরোধে হত্যার কথা। তবে পৌনে দুই বছরেও হত্যার রহস্যের কিনারা হচ্ছিল না।
অবশেষে আদালতে সেই মা স্বীকার করছেন, মোবাইলে প্রেমিকের সঙ্গে রাত জেগে কথা বলা বন্ধ না করায় মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন তিনি নিজেই।
নিহত এই তরুণী হলেন, পূর্বধলার বৈরাটি ইউনিয়নের দরুণ বৈরাটি গ্রামের মৃত এমএল মিয়ার মেয়ে সুমী কাউছার (১৮)। আর তার মা হলেন মোছা. জোসনা বেগম (৪৭)।
নেত্রকোণা জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান জানান, রোববার পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় মেয়েকে হত্যার পুরো বর্ণনা দেন জোসনা বেগম।
পরে তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার নেত্রকোণা বিচারিক হাকিম আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতেও জোসনা বেগম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
জোসনা বেগমের দেওয়া বর্ণনার বরাতে জেলা পুলিশের মুখপাত্র বলেন, সুমী রাত জেগে তার প্রেমিকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতেন। ফোনে কথা বলতে নিষেধ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাকে মারধর করতেন সুমি। কয়েকদিন ঘরের আসবাবপত্রও ভাঙচুর করেন।
ঘটনার দিন ২০২২ সালের ২২ অগাস্ট রাতেও প্রায় সাড়ে ৩টায় সুমী ফোনে কথা বলার সময় তার মা বাধা দেন। এতে দুইজনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে মেয়ের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন জোসনা বেগম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার পর জোসনা বেগম দাবি করেন- রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বসতবাড়ির পাশে টয়লেটে গিয়ে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে ঘরে আনলে ‘বুক জ্বলতেছে’ বলে ডাক-চিৎকার করার এক পর্যায়ে সুমী মারা যায়।
খবর পেয়ে পূর্বধলা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্যে নেত্রকোণা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সুমীকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়।
পরে থানার এসআই মো. হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন কৌশল এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হচ্ছিল না। পরে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে পর্যায়ক্রমে জোসনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মেয়ে তিনি সুমী কাউসারকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।